দ্য আজাদ স্টাফ
ইসলামে দেশপ্রেম
মুহাম্মাদ আব্দুদ দাইয়্যান
মা মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি- কোনোটি শিশু নিজ ইচ্ছায় বেছে নিতে পারে না। এগুলো হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত। একজন মানুষ, যে দেশের আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠে, যে দেশে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে, যে দেশের সম্পদ থেকে জীবিকা গ্রহণ করে, সে দেশকে সে ভালোবাসবে- এটাই বাস্তব। দেশপ্রেমের মূলে রয়েছে দেশের ভূখণ্ডকে ভালোবাসা, দেশের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ভালোবাসা, মাতৃভাষাকে ভালোবাসা। মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজই দেশপ্রেমের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ধাপে দেশপ্রেমমূলক অবদান রাখা সম্ভব। স্বদেশকে ভালোবাসা ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা ইমানি দায়িত্ব। আরবিতে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ- ‘হুব্বুল ওয়াতানি মিনাল ইমান।’ অর্থাৎ ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।’
স্বদেশের প্রতি রাসুলের (সা.) ভালোবাসার চরম প্রকাশ ঘটেছিল। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় তিনি দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে মক্কাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘হে মক্কা! তুমি কতই না উত্তম দেশ! আমি তোমাকে কতই না ভালোবাসি! তোমার অধিবাসীরা আমাকে বের করে না দিলে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোনো দেশে বসবাস করতাম না’ (তিরমিজি)। তাফসিরে কুরতুবিতে বর্ণনা করা হয়েছে, রাসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করছিলেন, তখন তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল।
স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কিছু করা গৌরবের বিষয়। দেশ ও জাতির জন্য আত্মনিবেদিত মানুষ সমাজের চোখে যেমন সম্মানিত, তেমনি আল্লাহর কাছেও অত্যন্ত গৌরবময় মর্যাদার অধিকারী। নবুয়ত লাভের পর সুদীর্ঘ ১৩ বছর রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা মক্কায় ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন। এমনকি এক পর্যায়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। অতঃপর ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে রাসুল (সা.) বিজয়ীর বেশে যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তিনি প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে দেশবাসীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে রক্তপাতহীন দেশপ্রেমের অনন্য আদর্শ স্থাপন করেছিলেন।
দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সীমান্তরক্ষীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। দেশের সীমান্তরক্ষী অতন্দ্র প্রহরীদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন, ‘একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারা ক্রমাগত এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারারাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম (মুসলিম)।’ দেশপ্রেম জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুটি চোখ জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি চোখ, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে; আর একটি চোখ, যা সীমান্ত পাহারায় বিনিদ্র রজনীযাপন করে (তিরমিজি)।’
মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা দেশপ্রেমেরই একটি অংশ। মহাগ্রন্থ আল কোরআন আরবিতে নাজিল করার কারণ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা স্বয়ং ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন এভাবে- ‘এটি আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পার।’ অর্থাৎ কোরআন আরবে নাজিল হয়েছিল; কারণ সেখানকার মাতৃভাষা আরবি (সুরা ইউসুফ :২)। আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, তাদের কাছে পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য’ (সুরা ইবরাহিম :৪)।
বান্দার প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হচ্ছে, নিজ দেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে রবের ইবাদত করা। সুনাগরিক হিসেবে আমাদের সবার ইমানি দায়িত্ব হলো একটি সুন্দর দেশ গড়তে একে অপরকে সহযোগিতা করা। যারা দেশের ক্ষতি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্ত অবস্থান নেওয়া। তাই আসুন, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করি। আল্লাহর অবাধ্যতার মধ্যে পড়ে না এমন সব বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করি; দলাদলি, দুর্নীতি ও সব বিশৃঙ্খলা থেকে সতর্ক থাকি।
daiyanjess@gmail.com