দ্য আজাদ স্টাফ
✍️শামসুল আলম
কে ইনি, যিনি কয়দিন পর পর কিছু দলদাস সাংবাদিক ডেকে তার বিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও নেতাদের গালিগালাজ করেন, মাতালের মত যা ইচ্ছা বুলি আওড়ান, আর এইসব উৎকট কথাবার্তা জাতিকে গেলাতে চেষ্টা করে ঐ দলদাসরা? তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী, মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করে দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে বসেছেন, আর নিজে এখন সাধু সাজার চেষ্টা করছেন!
খুব কষ্ট করে ধৈয্য নিয়ে ফেসবুক থেকে তার প্রেস কন্ফারেন্স ভিডিও শুনলাম। এই ১টা ঘন্টা নিজের ওপর টর্চার করেও যতটুকু মাথায় রাখতে পেরেছি, তা থেকেই রিভিউ লিখছি–
#তিনি তারই পা-চাটা সাংবাদিকদের ধমকাচ্ছেন, এত পত্রিকা-টিভি থাকতে ক্যাসিনোর খবর লিখতে পারলো না কেনো—আমাকেই কেনো খুঁজতে হলো? তার এই বক্তব্য শুনে কেউ কেউ অবশ্য প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শক্তি দিয়ে তা থামিয়ে দেয়া হয়েছে।অথচ তার এই বয়ান ছিল ডাহা মিথ্যা, কেননা ২০১৭ সাল থেকে দেশের কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা, যথা যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, এবং প্রাইভেট টিভি চ্যানেল রাজধানীর ১৫০ স্পটে ক্যাসিনো এবং জুয়ার কোর্ট নিয়ে সবিস্তারে রিপোর্ট করেছে। https://bit.ly/2Wqmxcd দেখুন কি লিখেছে ৯ জানুয়ারি ২০১৭: “তার শেল্টারে রাজধানীতেই অন্তত দেড়শ’ জুয়ার স্পট চলছে। প্রায় প্রতিটি জুয়ার স্পট গড়ে উঠেছে সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোর আদলে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা এসব জুয়ার আসর খোলা থাকে। পাহারায় নিয়োজিত নিজস্ব অস্ত্রধারী টিম। এদের আইনি ঝামেলা থেকে সুরক্ষা দেয় খোদ পুলিশ প্রশাসনেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা। একেকটি স্পটে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়। সে হিসাবে রাজধানীর জুয়ার স্পটগুলোতে দৈনিক ৩০০ কোটি টাকা উড়ছে। এ টাকার একটি বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে চলে যায় বিদেশে। আর সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে’তে বসে এ টাকা দিয়ে জুয়া খেলা ছাড়াও আরাম-আয়েশ করেন ‘সম্রাট’ নামের জনৈক ওই যুবলীগ নেতা। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সম্রাট নামের এ যুবলীগ নেতার হাত ধরে রাজধানীতে আরও অনেক ‘জুয়া সম্রাট’র জন্ম হয়েছে। রাজধানীর নামিদামি ক্লাবগুলো খেলাধুলা চর্চার জন্য গড়ে উঠলেও বাস্তবে সেগুলো পরিণত হয়েছে জুয়ার আস্তানায়। আর সবই সম্ভব হয়েছে কথিত এ জুয়া সম্রাটের কল্যাণে। তাই বেশিরভাগ ক্লাব জুয়াসহ রঙ্গমঞ্চের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় জুয়ার আসর বসে না এমন একটি ক্লাবও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ডিআইটিএস ক্লাব, আজাদ বয়েজ ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, বিজি প্রেস স্পোর্টিং ক্লাব, ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ কোনোটিই বাদ নেই এ বিষাক্ত ছোবল থেকে। এসব ক্লাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে। খেলাধুলার চর্চা বাদ দিয়ে ক্রীড়া সংগঠকদের অনেকেই এখন ক্লাবে জুয়া চালু রাখার পক্ষে। কেননা তাদের বক্তব্য, এতে ক্লাবের ‘আয়-উন্নতি’ ভালো হচ্ছে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ক্লাবের প্রভাবশালী হর্তাকর্তারা লাভবান হলেও সার্বিকভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একই সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গড়ে ওঠা ক্লাবগুলো এখন জুয়াড়ি ও অপরাধীদের দখলে চলে গেছে বললেও ভুল বলা হবে না। এসব ক্লাবে যারা জুয়া খেলতে আসেন তারা খেলায় হেরে গেলে লাভবান হয় সংশ্লিষ্ট ক্লাব। কারণ, প্রতিটি ক্লাবের রয়েছে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জুয়াড়ি টিম। তারা বেতনভুক্ত। কেউ কেউ ক্লাবের হয়ে কমিশনের বিনিময়ে খেলেন। তাই ক্লাবে এসে জুয়া খেলে যারা লাখ লাখ টাকা খুইয়ে যান তার সবই থেকে যায় ক্লাবের তহবিলে। পরে এসব টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়। আর অভিজাত ক্লাবগুলোতে যারা জুয়া খেলতে আসেন তাদের বেশিরভাগ সমাজের হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধ জগতের গডফাদারদের আনাগোনাও আছে এসব ক্লাবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে আইনশৃংখলা বাহিনী কী করছে। এ প্রশ্নের উত্তরে ক্লাবসংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তি বলেন, তারা অবশ্যই ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু জুয়া বন্ধে নয়, বরং তাদেরও কেউ কেউ এসব আড্ডায় শরিক হন।”
এরকম খবর লিখা হলো তিন বছর ধরে, অথচ সেগুলো উনি ইগনোর করে এখন চাপা মেরে যাচ্ছেন, তাছাড়া অদ্যাবধি ঐসব জুয়ার কারবারী ও গডফাদার সবাইকে ধরা হয়নি। কেবল বেছে বেছে ছোটবোনের সমর্থকদের ধরা হয়েছে! এ মহিলা কত্তবড় একটা মিথ্যুক এবং ফ্রড হলে বিনাভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন, অথচ তিন বছর ধরে পত্রিকাগুলি লিখে যাচ্ছে, কিন্তু উনি কোনো খবরই রাখেন না, আর এখন উল্টো ছিনাজুরি করছেন! গত ১১ বছর ক্ষমতায় থেকে কেবল রাজধানী নয়, পুরো দেশটাকে জুয়া, ইয়াবা, আর দুর্নীতির স্বর্গ বানিয়েছে! উল্টো আবার সাংবাদিককের ধমকান, কত্ত বড় প্যাথোলজিক্যাল লায়ার হলে এটা সম্ভব!
উনি যতই বলুন না কেনো- এটা শুদ্ধি অভিযান, কিন্তু দেশের মানুষ ইতোমধ্যে জেনে গেছে, এটা তাদের দুই বোনের ক্ষমতার ক্যাচাল—ছোটজনকে স্তব্ধ করতে, তার নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিতেই এই কথিত ক্যাসিনো অভিযান! রাজধানীর এইসব জুয়ার কোর্ট, ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, চোরাগলির যত কালোটাকার অবৈধ ইনকাম, এসবের সাথে লাইন আছে তার বোন, পুত্র, ভাই, এবং আত্মীয় নেতাদের। একেকটা জগতশেঠ, এরা মাসোহারা পায়। পরিবারের এক ঘষেটি বেগম এখন তার ক্ষমতার কেড়ে নিতে জানের উপর উঠেছে। আর তাকে ক্ষমতাহীন করতেই এই তথাকথিত ক্যাসিনো অভিযান!
#তিনি বললেন, মেননের ক্ষোভ থাকতে পারে, তাই ৩০ ডিসেম্বরের মিডনাইট ভোট নিয়ে মেনন জনগন ভোট দিতে পারেনি বলেছে! আরও ছাফাই গাইলেন, এলাকার এমপি হিসাবে মেননকে ইয়াংম্যানস জুয়ার ক্লাবের সভাপতি বানিয়েছে। অথচ তারই গোয়েন্দা সংস্থা প্রদত্ত রিপোর্ট হলো, ক্যাসিনো থেকে মেনন প্রতিমাসে ১০ লাখ টাকা নিতেন- https://bit.ly/325LHhC এখন তিনার কথা শুনে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, মেননের সাথে ওনার মিটমাট হয়ে গেছে, (আমে দুধে মিশে গেছে) তাই মেননকে বাঁচাতে তার পক্ষে ছাফাই গাইছেন তিনি! এরপরে তিনি কি করে দাবী করেন যে, তিনি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে নেমেছেন? বোন-জামাই ওমর ফারুক, ভাই সেলিম-হেলালরা, আরও জুয়ারী মন্ত্রী এমপি, নেতা, পাতিনেতারা, পুলিশ অফিসাররা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই হলো শুদ্ধি অভিযানের নমুনা!
#এই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জাতিকে শোনালেন, ফিলিস্তিনের হেবরনে নাকি তার বাপের নামে রাস্তা ওপেন করবে ফিলিস্তিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী! কিন্তু ঘটনা হইল, হেবরন ইসরাইলের দখলে, তাহলে ফিলিস্তিন ওখানে রাস্তা করবে কি করে? নাকি ইসরাইল এই রাস্তার করবে, সেটা তিনি বলতে পারছেন না? এইরূপ অবাস্তব আজগুবি খবর জাতিকে শুনিয়ে ওনার বাপকে নিয়ে আর কত নাটক করতে চান?
#তিনি খ্যাক খ্যাক করে দাবী করছেন, জিয়াউর রহমান নাকি দেশে দুর্নীতি চালু করেছিলেন! কিন্তু দেশের মানুষ তো জানে, রাষ্ট্রপতি জিয়া ক্ষমতায় এসে তার বাপের জমানার মহাদুর্নীতি, পারমিটবাজি, কালোবাজারি, অস্ত্রবাজি, বিনা বিচারে মানুষ হত্যাকরা, লাল নীল বাহিনীর অত্যাচার- এসব বন্ধ করেছিলেন। মানুষ ভুলে যায়নি, তার বাপের শাসনে পারমিটবাজী ও দুর্নীতি লুটপাটের কারণে ৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কথা, যাতে মারা গিয়েছিল প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। তখন তার পিতা চিৎকার করেছিলেন, “সবাই পায় সোনার খণি, আর আমি পাইছি চোরের খণি” – “সাড়ে সাত কোটি মানুষ, কম্বল আনলাম ৮ কোটি, আমার কম্বলটা গেলো কই” – “চাটার দল সব খেয়ে ফেলল”! এগুলা কি জিয়াউর রহমানের উক্তি ছিল? তাহলে উনি এসব ভুলে থেকে সর্বকালের সৎ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার নাম নেয়ার ধৃষ্টতা দেখান কি করে? জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল বিধায় দেশে দুর্নীতি বন্ধ হয়েছিল, সবুজ বিপ্লব করে জনগনের কাছে খাদ্য পৌছিয়েছিলেন, দুর্ভিক্ষ থামিয়েছিলেন। আর এই ভ্রষ্টা মহিলা জুলুম করে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে এখন নতুন আজগুবি গল্প শোনাচ্ছেন! তার এইসব মিথ্যাচার পাবলিক খায় না।
#তিনি দাবী করেন, দুর্নীতি নাকি কেবল বিএনপিই করছে, আর সে কারনে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে তিনি সাজা দিয়েছেন! উনি বলেন, খালেদা জিয়া নাকি এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন! কিন্তু ওনার এই জলজ্যান্ত মিথ্যা কথা কি দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? যেই টাকার কথা বলছেন তিনি, সেটা এতিমখানার ফান্ডেই ব্যাংকে রাখা আছে, তিনগুণ হয়েছে! দেশের কোর্টগুলার টুটি চেপে ধরে যে কেউ অমন রায় বের করতে পারে, শ্রীমতি। শুধু পরিবর্তনটা হোক, আদালত যখন প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে পারবে! তখন উঠে আসবে আজম জে চৌধুরীর দায়ের করা ঘুসের মামলা, তাজুল ইসলাম ফারুকের দুর্নীতির মামলা এবং কে কিভাবে তাকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছিল সেকথা, নূর আলীদের থেকে নগদ ঘুস নেয়ার মামলা, সাথে গত ১১ বছরের মহালুটপাটের শত শত মামলা হবে, যেখানে হিসাব পাওয়া যাবে ১ কিলো রাস্তায় খরচ হওয়ার কথা ১৫ কোটি, অথচ উনারা খরচ করেছে ১৮৩ কোটি টাকা- এভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট দুর্নীতির মামলা, ৯ লাখ কোটি টাকা পাচারের খতিয়ান। এখনকার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব রথি মহারথিদের কারো বাঁচার উপায় নাই।
#পেয়াজের দাম ১২০/১৪০ টাকা কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কি উত্তর দিব জানি না! অত:পর একটি চাপা মারেন, ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসে গেছে শীঘ্রই, ১০০ টনও আসবে সামনে। তাহলে কি বললেন তিনি? শীগগীরই আসছে, আরও আসবে মানে কি কিছু হইলো- অর্থাৎ কিছুই আসেনি? তাছাড়া তিনি স্টান্ডবাজি করলেন, তার বাসায় নাকি পেয়াঁজ ছাড়া রান্না হয়! এই আজগুবি তত্ত্ব মানুষ বিশ্বাস করবে কিকরে- কেননা ২০০৭ সালে তিনি এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন ১/১১র কারাগারে শেরেবাংলা নগর সাবজেলে বন্দী ছিলেন, তখন তাদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে খবর প্রকাশ হতো। তাতে লেখা হয়েছে, খালেদা জিয়া পেঁপের জুস পছন্দ করেন, আর তিনি পেয়াঁজ মরিচ দিয়ে মাখিয়ে মুড়ি চানাচুর। তো, এই যার অবস্থা, যিনি জেলখানাতেও থাকতেও পেয়াঁজ ছাড়া মুড়ি খেতে পারেন না, তিনি নাকি এখন ক্ষমতার গদিতে বসে পেঁয়াজ ছাড়া তরকারী খান! এরপরে পাবলিক কি ওনার পেঁয়াজ না খাওয়ার এ সস্তা গল্প বিশ্বাস করবে?
তার এত এত কান্ডকীর্তি ও মিথ্যাচার শুনে দেশের মানুষ বুঝতে পারছে, কেনো সর্বোচ্চ আদালত তাকে রংহেডেড ঘোষণা করেছিল! দেশের দুর্ভাগ্য, এমন একটা নষ্ট ফ্রড মিথ্যুক গদি আঁকড়ে আছে ১১টা বছর!!