দ্য আজাদ স্টাফ
শামসুল আলম
ওবায়দুল কাদের এবং তার নেত্রী স্পষ্টভাবেই বললেন, খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপি এমন কোনো আন্দোলন করেনি যে, মুক্তি দিতে হবে! এছাড়াও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ারকে দিয়ে ফরমায়েশি প্রেস কনফারেন্স করিয়েছেন যে, বেগম জিয়ার অসুস্থতা তেমন গুরুতর নয়, বিদেশে চিকিৎসার দরকার নাই। অন্যদিকে আত্মীয় স্বজন ও হাসপাতালের স্বতন্ত্র মাধ্যমের খবর হলো, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল অবস্থায় পৌছেছে।
বিএনপির মহাসচিব ১৮ দিন বিদেশে থেকে এসে মিডিয়াকে বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তিনি যাতে জামিন পেয়ে বের হতে না পারেন, সরকার সেই চেষ্টা করছে। সরকার পুরোপুরি তার জামিন আটকে দিয়েছে। তিনি সুস্থ অবস্থায় আর ফিরে না আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্রাণনাশ করতে সরকার মহাপরিকল্পনা আঁটছে!
তো এখন কি দাড়াইলো? সরকার বলছে, বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি বা করছে না, তাই তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি দিচ্ছেনা। অন্যদিকে, বিএনপি এখনও বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তোলেনি। তাহলে ট্রিকসটা কোথায়? খালেদা জিয়ার জামিন পেতে হলে বিএনপিকে রাজপথ কাঁপাতে হবে, নইলে জামিন হবে না। অন্যদিকে ধরপাকড় ও নির্যাতনের ভয়ে বিএনপি এখন পর্যন্ত সিরিয়াস কোনো আন্দোলনে নামেনি। তবে কি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কোনো জোরালো আন্দোলনে নামবে না- বিএনপি এবং বিএনপির বাইরের লাখ লাখ মানুষের মনে এমন প্রশ্ন?
খালেদা জিয়া কোনো ঠুনকো মানুষ নন। দেশের ৪ বার প্রধানমন্ত্রী থেকে দেশ পরিচালনা করে জনগন ও রাষ্ট্রকে অনেক কিছু দিয়েছেন। ২ বারের বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে জনগনের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। ২৩টি নির্বাচনী আসনের কোথাও না হেরে বিশ্ব রেকর্ডগড়া অজেয় এক লড়াকু রাজনীতিক, চার দশক ধরে দেশের সর্ববৃহদ রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, গণতন্ত্রের জন্য বার বার কারা নির্যাতন সইছেন। গণতন্ত্রহীন বর্তমান বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের মা’ খালেদা জিয়া।
এখন শোনা গেলো, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তি নিয়ে বিএনপি নাকি আবার রাষ্ট্রদূতদের সাথে বসবে! মীর্জা ফখরুল এবং তাঁর এসোসিয়েটসদের কাছে বিএনপি কর্মীদের প্রশ্ন- রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করে কি ঘন্টা বাজাবেন আর? অনেক তো হলো! এই নিয়ে ৮/১০ বার মিটিং তো করেছেন- কোনো ফয়সালা করতে পেরেছেন? তারা কিছু বলেছে? কেনো সল্যুশন দিয়েছে? তবে কেনো শুধু শুধু টাইম কিল করছেন? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই কিছু নেতারাই চাইছেন না- খালেদা জিয়া মুক্তি পাক! স্টান্ডিং কমিটির অন্তত ৪ জন সদস্য আমাকে বলেছেন- এক নেতা নাকি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন! যদি তাই হয়ে থাকে- তবে তো ভিলেন পাওয়া গেছে। খালেদা জিয়া বের হয়ে আসলে অনেকের নেতৃত্ব থাকবে না, তাই কি মুক্তির জোরালো আন্দোলনে এত গড়িমসি?
তারেক রহমান খালেদা জিয়ার একমাত্র পুত্র সন্তান, তিনি এখন দলের অস্থায়ী দায়িত্বে। তাঁর উচিত মাকে বাঁচাতে যা দরকার, সব করা। উনি নির্বাসনে আছেন- কিন্তু যখনই কর্মসূচি দিতে যান, বাধা দেয় সিনিয়র নেতারা- আন্দোলন করলে নাকি ধরপাকড় হবে, নেতাকর্মীদের ক্ষয়ক্ষতি হবে- তাই থামিয়ে দেয়া হয়। প্রশ্ন হলো- এইসব অযুহাত দেখিয়ে আর কতদিন নেতারা আন্দোলন ও ম্যাডামের মুক্তি আটকে রাখবেন? নেতারা তো জেলের বাইরে দিব্যি আছেন, গাড়িতে চড়ছেন, ব্যবসা বানিজ্য করে খাচ্ছেন, বিয়েশাদিতে চকচকে চেহারা দেখা যাচ্ছে! অনেক কর্মীরা বলছেন, উনারা ক্ষমতাসীনদের সাথে লাইনে করেই স্বাভাবিক জীবন যাপনে আছেন, বাড়িতে ঘুমুচ্ছেন! যদি তাই হয়, তাহলে উনারা বলে দিন, আমরা বেশ আছি…. খালেদা জিয়া এখন আমাদের লায়বিলিটি- উনার জন্যে আমরা কিছু করতে পারব না! তাহলে তো ল্যাঠা চুকে যায়! আল্লাহর মাল, যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন!
কথা কি শেষ হয়ে গেলো? না। দেশের কোটি কোটি নেতাকর্মী কি এমনটা চায়? না। আমরা যারা সামাজিক মাধ্যমে হাজার লক্ষ মানুষের সাথে কানেক্টেড, আমরা জানি তাদের মতামত। নেতা কর্মী শুভাকাঙ্খি ভোটাররা বলেন, যত ত্যাগ লাগুক, তারা চায় খালেদা জিয়ার মুক্তি। তারা জানে এবং বিশ্বাস করে- খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে বাংলাদেশের মুক্তি। যতদিন উনি বন্দী, ততদিন বাংলাদেশও বন্দী। অন্তত ৮০% জনসমর্থন নিয়ে বিএনপি এখনও কেনো এত পিছটান? যে কয়টা দালাল নেতা দালালি করছে, তাদের সাইডে ফেলে দিয়ে বিএনপি কি কেবল রাজধানীতে টানা কর্মসূচিতে যেতে পারে না? কেনো আবরার ইস্যু ছেড়ে দিলেন, কেনো ভারতের সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি নিয়ে কর্মসূচি দিলেন না? বিএনপির কি যোগ্যতা নাই, লোকজন নাই আন্দোলন করার? অবশ্যই আছে। আমার কাছেই খবর আছে, রাজপথ কাঁপানোর মত শক্তি এবং লোকবল দুটোই আছে। শুধূ সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে নামিয়ে দিতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবীতে কর্মসূচি দিন। মানুষ নামবে। প্রশাসন ও পুলিশ কি বলে, সেটাও আমার জানা আছে।
আমি ১৬ বছর দেশনেত্রীর পার্সোনোল স্টাফ ছিলাম, ভেতরের বাইরের, সরকারের সব লেবেলের খবরই আমার কাছে আসে এবং থাকে। বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে বলব, আপনারা বিশ্বাস করুন- ম্যাডামের শরীর খুব খারাপ, এখানে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে না। এভাবে চললে যেকোনো সময় খারাপ কিছু শুনতে হতে পারে। তাই দ্রুত ম্যাডামকে মুক্তির ব্যবস্থা নিন। যা দরকার, যত কিছু প্রয়োজন, সব করুন। পাছে, একটা কিছু ঘটে গেলে আর ফেরত পাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও চিন্তা করে দেখুন, খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যা করার যে প্লান, এটা বাস্তবায়ন করে কি লাভ হবে, নাকি লোকসান? দেশের যে রাজনীতির অবস্থা, তাতে একটু উনিশ/বিশ পরিস্থিতিতে যদি জনগন ক্ষেপে ওঠে, তবে লাখ লাখ মানুষ নিহত হতে পারে। ঐ সময় দেশের একজন মুরব্বী দরকার, যার কথা দেশের সবাই শুনবে। লক্ষ করুন- সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নয়, বরং খালেদা জিয়া। উনিই পারবেন জাতিকে কথা শোনাতে। এছাড়া এখনও আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আপনি উনাকে যতই সহ্য করতে না পারুন, আপনার বিপদের সময় আপনি কিন্তু সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকবেন খালেদা জিয়ার কাছে। কারণ তিনি ভদ্র রাজনীতিক, প্রতিহিংসাপরায়ণ নন, ক্ষমা করতে জানেন। মনে রাখবেন, সামনে যে বিপদ আসতেছে, তাতে বাঁচতে হলে আপনার খালেদা জিয়াকেই দরকার। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে, দেশের শান্তির কথা ভেবে এই মুরব্বী রাজনীতিকের বেঁচে থাকার জন্য তার বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিন। মানুষ বেঁচে থাকলেই তার সাথে প্রতিযোগিতা করা যায়, খেলা যায়, এমনকি শত্রুতাও করা যায়। কাজেই চামচাদের বুদ্ধিতে নয়, বিবেক দিয়ে বিচার করুন।