দ্য আজাদ স্টাফ
গণহত্যা এখনও চলছে, সেনাপ্রধান ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার চায় গাম্বিয়া
দ্য আজাদ ডেস্ক
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণসহ নানা নির্যাতন ও নিধনযজ্ঞের বিচার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) এই বিচারের শুনানি শুরু হয়।
শুনানি চলাকালে গাম্বিয়ার পক্ষে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে বলেই বিভিন্ন সময় গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমারে এখনো গণহত্যা চলছে। যদিও তারা তা অস্বীকার করবে। তারা হয়তো যুক্তি দেখাবে। অথচ তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যে কাজ করছে।’
রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা প্রয়োজন। এখনো তারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে ঝুঁকি বাড়ছে বলেও দাবি করে দেশটি।
‘আদালতের প্রতি আস্থা রয়েছে বলেই গাম্বিয়া আদালতে এসেছে। গাম্বিয়া চায় আদালত মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধ করতে বাধ্য করুক। মিয়ানমার যেনো আর কখনো গণহত্যা চালাতে না পারে। আদালত হচ্ছে গণহত্যা প্রতিরোধের একমাত্র অভিভাবক।’
গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে বলে দাবি উত্থাপন করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি বলেছে, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেছিলো। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করেছিলো। মা-শিশুদেরকেও হত্যা করা হয়েছিলো। সেনাবাহিনী প্রথমে বিদ্রোহীদের দমন করার কথা বললেও তারা মূলত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে।’
‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। নারীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে ‘মিয়ানমার তোদের দেশ নয়’। এসব কথা যারা হত্যার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে তাদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি।’
মামলার বাদীর দেশটির দাবি, ‘যেসব গ্রামে রোহিঙ্গা নেই, সেসব গ্রামে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে বহু বছর ধরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। জাতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের নিধন করার উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। এসব তথ্য আছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনে।’
‘মিশনের তথ্য প্রমাণ করছে, রোহিঙ্গাদের জোর করে বন্দিশিবিরে নিয়ে আনা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার কথা বলে সেখানে আনা হয়েছিলো। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য ছিলো তাদের নিধন করা। দেশ থেকে বিতাড়িত করা। এই কাজটি রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী করেছে।’
মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করেননি বলেও অভিযোগ করা হয়।
‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। তাদের জমিজমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। তাদেরকে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।’
আদালতে ১৫ জন বিচারপতির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুজন এডহক বিচারপতি। ওই দুজন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত। আদালতের সিদ্ধান্ত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।
আদালতে অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে হাজির হয়েছেন। গাম্বিয়ার পক্ষে আছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। নিয়মানুয়ায়ী শুরুতেই দুই এডহক বিচারপতি গাম্বিয়ার নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের প্রফেসর ক্লাউস ক্রেস শপথ নিয়েছেন।