দ্য আজাদ স্টাফ
জনহৃদয়ের স্থায়ী কমিটিতে খোকার ঠাই
বিপ্লব কুমার পোদ্দারঃ খোকার মৃত্যুই তাঁকে অমরতা দিয়ে রাজনীতিবিদদের জন্য এক শিক্ষনীয় বিষয় নতুন করে স্থাপন করে গেলেন। একজন মানুষের বিচার হয় মুলত তার মৃত্যুর পরে, মানুষ তাকে কিভাবে মুল্যায়ন করে। সেই বিচারে খোকা অাজ জনতার দরবারে সর্বচ্চো মার্কস নিয়ে বহুদিন বেঁচে থাকবেন বলে অামার বিশ্বাস। সাস্প্রতিক কালে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের মৃত্যুর পরেও এরকম সামগ্রিকভাবে দেশবাসীকে শোকার্ত হতে দেখা যায় নি। মনে হয় বিএনপির মধ্যে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরে, খোকার নিথর মৃতদেহটি দেখতে জনতার ঢল নেমেছিল। এইক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ না দেয়ার মত কৃপনতার সাক্ষর রাখতে অামি রাজি নই। তিনি এক মহান মুক্তিযোদ্ধার শেষ ইচ্ছা পুরনের জন্য উদারভাবে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা খোকাকে তার নিজ দেশে শান্তিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অাপনার এই মহান উদারতার জন্য।
অাজ লিখতে গিয়ে ছোট ছোট কয়েকটি স্মৃতি অথবা খোকা ভাইয়ের রাজনৈতিক প্রতিকুলতার কথা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। যে সমস্ত শীর্ষ ব্যাক্তিবর্গ স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ লাভ করেছেন,তার মধ্যে খোকা ভাইয়ের স্থান প্রথমদিকেই থাকা উচিত ছিল। তবে অাজ দুঃখ নেই, শুধু বিএনপির অনুসারীরা নন বাংলাদেশের অাপামর জনসাধারন তাদের যথেষ্ট সন্মান দিয়ে প্রমান করে দিয়েছেন,তুমি রবে না অাজ নীরবে,রবে অামার হৃদয় জুড়ে। এ থেকে বিএনপির নেতৃত্বের যদি কিছু শিক্ষনীয় থাকে তবে দেশ এবং তাদের দল উপকৃত হবে।
হঠাৎ করে বাংলাদেশের এক ধরনের শিক্ষিত সন্ত্রাসী শ্রেনীর অাবির্ভাব হয়েছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নামক গুরুত্বপুর্ন এবং অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নিয়ে অপকর্মকে ঢাকতে ছাত্রদের লেলিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করেন না,তাদের পদ পদবি ধরে রাখার জন্য। এ ধরনের কার্যকলাপ, নাটক বা সিনেমার গল্পকে হার মানিয়ে চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু নজর দেবেন কি? কারন পরোক্ষভাবে অাপনারই ক্ষতি সাধন করছেন তারা। এরকম চলতে থাকতে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষালয়গুলো ধংস্বস্তুপের দিকে ধাবিত হবে। অামি অামার শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন বহু অান্দোলনের স্বাক্ষী থাকলেও বর্তমান ভিসি মহোদয়দের অাচরন সত্যি অামাকে অবাক করে দেয়।
যদি সাম্প্রতিকালে লক্ষ্য করি নব্বইয়ের শেখ হাসিনার চেয়ে একবিংশ শতাব্দীর শেখ হাসিনা অনেক পরিনত। যেমন ধরা যাক, অতি জনপ্রিয় কোন সাংগঠনিক নেতাও অপকর্মে লিপ্ত হলেও তিনি ব্যবস্থা নিতে কুন্ঠাবোধ করছেন না,এমনকি নিজের অাত্বীয় হলেও। তবে অামরা প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপের শেষ দেখতে চাই। তবে শংকাও জাগে হঠাৎ করে অাবার এই পদক্ষেপ থেমে অাছে কি-না। এ থামাকে পুনরায় শুরুর কোন পুর্বপ্রস্তুতি নাকি অংকুরে বিনষ্ট হয়ে যাওয়া?
এনঅারসি নিয়ে ভারতে বিজেপির দ্বিমুখী অাচরন অামাকে প্রথম থেকে অাতংকিত করেছে। বিজেপির উগ্র রাজনৈতিক প্রচারে ধর্মের ব্যবহার ঘটিয়েও সাম্প্রতিক বিধানসভার নির্বাচনে ভাল ফল করতে না পারাটা প্রমান করেছে বিজেপি সরকারের উপর থেকে মনে হয় ভারতবাসীর মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে। অাজো কিন্তু কাশ্মীরের বারুদের গন্ধ কিংবা গ্রেনেড হামলা কিংবা সাধারন মানুষের উপর অত্যাচার কমার কোন সুখবর নেই। অাবার এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে বসে ভারতের একটি রাজ্যের স্বাধীনতা ঘোষনা করে প্রবাসী সরকার দাবি করে একটি পক্ষ সংবাদ সন্মেলন করেছে। তাই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কিংবা সামরিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা না করে যৌক্তিকভাবে সমাধান করলে কোন পক্ষকেই পরাজয়ের গ্লানিতে ভুগতে হয় না। অাঞ্চলিক অাধিপত্যবাদ কায়েমের লক্ষ্য থেকে সরে এসে এনঅারসি প্রক্রিয়া বন্ধ করে বাঙালীকে মুক্তি দিন। নতুবা বাঙালীর ধৈয্যের বাধ ভেঙে গেলে সেটা হয়তো বিজেপি সরকারের সামাল দেয়া কঠিন হতে পারে। চেয়ে দেখুন,পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃনমুল থেকে বিজেপিতে অভিনব কায়দায় যোগদানের হিড়িক শুধু অাজ থেমেই নেই, বরং যোগদানকারীরা অাজ বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করছে। সুন্দর হোক প্রতিটি সরকার,এই সুন্দর পৃথিবীর মতো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অার একবার উদার হোন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিয়ে অনন্য উদাহরন তৈরী করুন। যা অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে।
বিপ্লব কুমার পোদ্দার,লেখক লন্ডনে বসবাসরত সমাজকর্মী ও অাইনজীবি ।