দ্য আজাদ স্টাফ
‘যখন আমার মেয়ের এইচআইভি ধরা পড়ল, তখন আমার স্বামী সঙ্গেই ছিলেন। ওই সময় তিনি যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা আমি কোনো দিন ভুলব না।’ এইচআইভির সঙ্গে লড়াই করা এক মায়ের প্রতিক্রিয়া এটা। ওই মা দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দা। যিনি দীর্ঘ বছর ধরে সন্তানকে নিয়ে লড়াই করছেন এই অসুখের বিরুদ্ধে।
ব্রিটেনের দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে ৭১ লাখ মানুষ এই ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করছে। এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই সেখানে বেশি। একই বয়সী পুরুষের তুলনায় চার গুণ বেশি নারী এই সংক্রমণের শিকার। এই নারীদের মধ্যে অনেকেই অজান্তে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন, আর অজান্তেই তাঁদের সন্তানদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
নারীদের সংক্রমণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যার দিকে শুধু অসামঞ্জস্য যে রয়েছে তা নয়, জীবন পাল্টে দেওয়া এই অসুস্থতার দায়ভার নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও সেখানে রয়েছে।
পাপবোধ, লজ্জা আর দায়িত্ব—এই সব শব্দ হৃদয়বিদারক এই ভাইরাসের পাকে ঘুরতে থাকে। পরিণতি হিসেবে তা জীবনভর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সিলভিয়া হচ্ছেন তেমনই এক নারী, যিনি এই সব পরিসংখ্যানের মধ্যে বসবাস করছেন। সিলভিয়ার লড়াই যেন ইতিহাস তৈরি করছে। ভালোবাসা ও শক্তিতে কানায় কানায় পূর্ণ এই নারী। কন্যাকে নিয়ে তাঁর গর্বের বিষয়টি স্পষ্টই অনুভব করা যায়। সিলভিয়ার মেয়ের নাম শামিন। বয়স ১৭ বছর।
শামিনের জন্মের মুহূর্তটি তাঁর জীবনের সেরা ঘটনা বলে মনে করেন সিলভিয়া। তিনি বলেন, শামিন জন্ম নেওয়ার পর আমার মনে হলো, আমি এই দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মা।
তবে যে মেয়েকে নিয়ে সিলভিয়ার এত আনন্দ, গর্ব, সেই মেয়েকে নিয়ে তাঁর লড়াইয়ের গল্পটি আবেগ-আপ্লুত করার মতো। ১৪ বছর আগে শামিনের বয়স যখন তিন বছর, তখন সে ভয়াবহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকেরা নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানান, শামিনের দেহে এইচআইভি পজিটিভ।
সিলভিয়ার ভাষায়, ‘যখন আমার মেয়ের এইচআইভি ধরা পড়ল, তখন আমার স্বামী সঙ্গেই ছিলেন। ওই সময় তিনি যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা আমি কোনো দিন ভুলব না। যেন আমিই এইচআইভি নিয়ে এসেছি এবং জেনেশুনে মেয়েকে তা দিয়েছি।’
সিলভিয়া যে সময় গর্ভধারণ করেছিলেন, ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষা করা হতো না। তবে শুধু এই কারণে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি তা নয়, তিনি নিজেও এই ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। আর এই না জানার বিষয়টি এখনো সিলভিয়াকে কুরে কুরে খায়।
সিলভিয়া বলেন, ‘ভুলটা কী ছিল—এমন প্রশ্ন কতবার যে মনে এসেছে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না, আমার এইচআইভি পজিটিভ। আর আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। আমি এখন মনে করি, আমার বুকের দুধ খাওয়ার মধ্য দিয়ে আমার মেয়ের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছে। মিথ্যা বলব না, আমি খুবই কষ্ট পেতাম এটা ভেবে। নিজেকে দায়ী করা থেকে বিরত থাকতে পারতাম না। আমি আমার মেয়েকে অসুস্থ বানিয়েছি—এ নিয়ে প্রতিনিয়ত চলত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ।’
কীভাবে তাঁর এইচআইভি পজিটিভ হলো—এ নিয়েও প্রশ্ন জাগত সিলভিয়ার মনে। অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্কের বিষয়টি তখন জানতেন না বলে এই নিয়ে মনে ধাঁধার সৃষ্টি হয়।