দ্য আজাদ স্টাফ
দিল্লির উত্তাপ ঢাকায় ছড়ানোর শঙ্কা মুজিববর্ষে মোদিতে বাগড়া : ডান-বামে আকস্মিক মিল!
সহজ এবং আনন্দঘন ভাবা হলেও দিনকে দিন কঠিন পর্ব হয়ে উঠছে মুজিববর্ষ উদযাপন। একের পর এক ঘটছে অঘটন। একদিকে মুজিববর্ষকে এ-যাবৎকালের সেরা উৎসবে রূপ দেওয়ার আয়োজন, অন্যদিকে ব্যাংক সেক্টরের মাফিয়া, রাজনীতির হেরেমের পাপিয়া, ক্ষমতাসীন দলের খুচরা নেতাদের বাড়িতে টাকার সিন্দুক, বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ, খুন, বিদ্যুৎ-পানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়েও গন্ডগোলের শঙ্কা। তার ঢাকা সফর নিয়ে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। দিল্লির উত্তাপ ছড়াতে পারে ঢাকায়ও। এর মাঝেই এই বর্ষে আগুনসহ গার্মেন্টসে নৈরাজ্যের ভয়ংকর গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আবহাওয়া বার্তাও।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী রাজকীয় আয়োজনের পরিকল্পনা আগেরই। ক্ষণ গণনা পর্বেই সরকারি-বেসরকারি কোনো কোনো মহলের অতি উৎসাহ সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। আয়োজনটির মাধ্যমে জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারের কথা বলা হলেও ঘটছে ভিন্ন কিছুও। বিশাল খরচের পাশাপাশি ব্যতিক্রম কিছু দেখানোর চেষ্টায় লেজেগোবরে অবস্থা করেও ছাড়ছেন কেউ কেউ। ক্ষণ গণনার আগেই বঙ্গবন্ধু বিপিএল দিয়ে বিতর্ক জমানো হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিলামে তোলার টুর্নামেন্ট, চার-ছক্কার বিনোদনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে? বলিউডের দুই গায়ককে এনে বঙ্গবন্ধুকে কী সম্মান দেওয়া হলো? এসব প্রশ্ন হালে পানি পায়নি।
সরকারি ঘরানার বিশিষ্ট কয়েকজন এসব প্রশ্ন তুলে তুলাধোনার শিকার হয়েছেন। তাদের দশা দেখে বাকিরা চুপসে গেছেন। এর জেরে যে যেদিকে পারছেন করে ছাড়ছেন। বগুড়ার একটি স্কুলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির মুখোশ পরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে স্বাগত জানানোর ঘটনা মানুষকে রীতিমতো বিনোদন দিয়েছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির মুখোশ পরে শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানায় শিক্ষার্থীরা। ছবিটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ভাইরাল হয়।
অনির্ধারিতভাবে বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বড় বড় বাজেট দিয়ে নতুন কাজ বা কর্মসূচি না দিতে মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘটনাচক্রে বেশি ঝামেলা হয়ে দেখা দিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর।
দিল্লিতে দাঙ্গা, মুসলিম হত্যার ঘটনা না ঘটলে এ সমস্যা হতো না। এর পরও তাকে ঠেকানোর দাবি পাত্তা দিতে রাজি নয় সরকার। বিরোধিতাকারীরা সুবিধা করতে পারবে না বলেও নিশ্চিত সরকার। বিএনপি এ নিয়ে বেশি দূর এগোবে না বলে জানে সরকার। তবে এ ইস্যুতে বাংলাদেশের ডান এবং বামপন্থী সংগঠনগুলোর এক হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটি ‘কিন্তু’ গেঁথে গেছে। সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকলেও কূটনৈতিক সচেতনরা জানেন, ঢাকা চাইলেও নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর আটকাতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার নরেন্দ্র মোদিকে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। তবে লেনদেন, বিনিময়সহ অনেক নতুন সুযোগ তৈরির সুযোগ পাবে সরকার। সার্বিক পরিবেশ ও জিও পলিটিক্যাল সিচুয়েশন বিবেচনায় মোদির কাছে অনেক কিছু পাওয়ার আছে শেখ হাসিনার। আবার চাওয়া-পাওয়ার লম্বা লিস্ট মোদিরও। এ অবস্থায় মুজিববর্ষ নিয়ে সব মিলিয়ে ভারতের দিক থেকে নির্ভার সরকার। টেনশন কেবল দেশে। তুলনামূলক সেটার ঝুঁকি বেশি গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। গার্মেন্টস শিল্পে বিশৃঙ্খলা ও নানা ঘটনাপ্রবাহে অস্থিরতা তৈরির পেছনে কিছু কারসাজি সম্পর্কে আরো আগেই অবহিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পেয়েছেন প্রমাণও।
এ সেক্টরে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার খবর ফলাও করে বিশ্বব্যাপী প্রচারের আয়োজনে তার ধারেকাছের কিছু ব্যক্তির সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়েছে। সাময়িক লাভের জন্য তারা এই দেশবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত তাদের দমন বা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও গার্মেন্টসে আগুন দেওয়ার সর্বনাশা চক্রান্ত রোখা কঠিন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে পাটের গুদামে আগুন লাগা বা লাগানোর সঙ্গে গার্মেন্টসে আগুন পরিকল্পনার কিছু মিলও পাওয়া গেছে। নানাভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে গার্মেন্টস শিল্পকে পাটের দশায় নেওয়ার ষড়যন্ত্রটি মুজিববর্ষে কোনো পর্যায়ে ঠেকে কি না, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক প্রধানমন্ত্রী। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে তাকে সার্বক্ষণিক তথ্যে আপডেট জানাতে।
এবার প্রাকৃতিক আবহাওয়াও বিরূপ। বৈশাখ আসতে আরো দুই মাস বাকি। কিন্তু ফাল্গুন মাসেই তীব্র ঝড়সহ দেশে কয়েকটি কালবৈশাখী আঘাত হানার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। ঝড়-বৃষ্টির পানিতে বন্যার শঙ্কাও রয়েছে। এর বিপরীতে রাজশাহী-রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে দাবদাহ। অন্য সময়ের জন্য এটি কোনো বিষয় হয় না বা হবে না। কিন্তু মুজিববর্ষের জন্য ঘটনায় রূপ নেওয়ার শঙ্কা থেকে যায়। ডান-বামে আকস্মিক মিল!
বাংলাদেশে ইসলামপন্থী এবং বামপন্থী দলগুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসা ঠেকাতে একজোট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৭ মার্চ দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন মোদি। ইসলামপন্থী এবং বামপন্থী দলগুলোর আপত্তির মুখেই মুজিব জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর হামলা ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর বাতিলের জন্য সরকার-সমর্থিত ইসলামি দল হেফাজতে ইসলামসহ ছয়টি ইসলামি দলের ঢাকায় বিক্ষোভে কিছুটা বিব্রত সরকার। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদিয়া (কাদিয়ানি) বিরোধী এক মহাসমাবেশেও মোদি ঢাকায় মাটিতে পা রাখলে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটানোর হুমকি দেয় হেফাজতে ইসলাম।
ইসলামি দলগুলোর পাশাপাশি দিল্লির সহিংস ঘটনার প্রতিবাদ করেছে গণসংহতি আন্দোলনও। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের এখন কর্তব্য হচ্ছে ভারত সরকারের এই সাম্প্রদায়িক নীতির এবং হামলা-হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানানো, তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ঘোষণা নিয়ে দাঁড়ানো। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়ে যেকোনো সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শঙ্কাও করছেন বিজ্ঞজনেরা।