দ্য আজাদ স্টাফ
শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশের মাঈনুল আহসান নোবেলকে।
ভারতের জি বাংলার গানবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা-২০১৯’ তে প্রীতমের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় রানার্সআপ অর্থাৎ তৃতীয় হয়েছেন তিনি।
যদিও এ আয়োজনের চূড়ান্ত পর্বের ফল অনেক আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। তবু দর্শক-ভক্তদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। গ্রান্ড ফিনালেতে যদি ফলে পরিবর্তন আসে, সে আসায় রোববার রাতে টিভি সেটের সামনে বসেছিলেন বাংলাদেশিরা।
সেই ফলের কোনোই ব্যতিক্রম ঘটেনি।
গতকাল আবারও বাংলাদেশি দর্শকদের মন ভাঙল ‘সা রে গা মা পা-২০১৯’ অনুষ্ঠানটি। প্রতিযোগিতার ফল নিয়ে খুশি হতে পারেননি নোবেলভক্তরা।
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন তারা। সমালোচনার মন্তব্যে ভাসাচ্ছেন ফেসবুক ও টুইটার। এমনকি বাসে, রাস্তায় বা পার্কেও শোটি নিয়ে চলছে সমালোচনা।
সবার মুখে প্রায় একটিই কথা উচ্চারিত হচ্ছে- নোবেলের ওপর অবিচার করা হয়েছে।
যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, পুরো শোতে বিচারকরা যেখানে নোবেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, সেখানে চূড়ান্ত পর্বে এসে তিনি কী করে তৃতীয় হন!
তাদের দাবি, এমন ফলে পশ্চিমবঙ্গের দর্শক-শ্রোতারাও খুশি নন।
নোবেলভক্তরা তাদের সেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
শেখ শাহাদাত তাসিন নামে এক নোবেলভক্ত ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটি মানতে কষ্ট লাগছে যে, নোবেলের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। যাকে সেরা বর্ষসেরা শিল্পী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, তার থেকে অনেক ভালো পারফরম্যান্স ছিল নোবেলের।’
তিনি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি জানা কথাই ছিল। ভারত কখনও বাংলাদেশের একজন শিল্পীকে এ পুরস্কার দেবে না।’
মোফাজ্জল হোসেন লিখেছেন, ‘নোবেল যে প্রথম হবে না, এটি আগে থেকেই জানতাম। তারা তাকে প্রথম হতে দেবে না। এতে আমাদের আপত্তিও নেই। নোবেল যে সবার সেরা, সেটি কলকাতার মানুষও জানে। তাই ফলের দিকে তাকানোর কোনো প্রয়োজন মনে করছি না আমি।’
তানিয়া হক নামে একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বেলায় ওরা সবসময়ই দুর্নীতি করে। এর আগেও দেখেছি, এটি নতুন কিছু নয়। সেটিই দেখলাম সা রে গা মা পার গ্র্যান্ড ফিনালেতে।’
ক্রিকেটভক্ত একজন বিষয়টিকে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের সঙ্গে মিলিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘এ রকম বৈষম্য আমরা ক্রিকেট খেলাতেও দেখতে পাই। মাঠে আম্পায়ারদের থেকে ভারতীয় খেলোয়াড়রা নানা সুবিধা নিয়ে থাকেন। এবার গানের বেলায়ও দেখলাম। সমস্যা নেই, মাথায় মুকুট না উঠুক, নোবেল যে আসরের প্রতিটি পর্বে বিচারকদের তার গান দিয়ে কাঁদিয়েছেন তা বিশ্ব দেখেছে।’
‘সা রে গা মা পা-২০১৯’ এর সোশ্যাল মিডিয়া পেজেও নানা নেতিবাচক মন্তব্য করে যাচ্ছেন নোবেলভক্তরা।
রোববার রাতে প্রচারিত ‘সা রে গা মা পার গ্র্যান্ড ফিনালেতে নোবেল গেয়েছেন প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা আর জেমসের কণ্ঠে জনপ্রিয় হওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটি। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি আরও গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি’ ও প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’।
সা রে গা মা পার এবারের চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা নির্বাচিত ছিলেন, তারা হলেন- সুমন মজুমদার, অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, গৌরব সরকার, নোবেল, স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিক, প্রীতম রায়।
সেরার মুকুট উঠেছে উত্তর চব্বিশ পরগনার অঙ্কিতার মাথায়। তিনি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন দুই লাখ রুপি ও একটি নতুন গাড়ি।
যৌথভাবে প্রথম রানার্সআপ নির্বাচিত হয়েছেন কলকাতার গৌরব এবং উত্তর দিনাজপুরের স্নিগ্ধজিৎ। এর পর দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছেন প্রীতম ও মাঈনুল আহসান নোবেল।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন যীশু সেনগুপ্ত। বিচারক ছিলেন মোনালী ঠাকুর, শান্তনু মৈত্র ও শ্রীকান্ত আচার্য।
প্রথম হতে না পারলেও ‘সা রে গা মা পা’ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কলকাতা ও বাংলাদেশে দারুণ পরিচিতি পেয়েছেন মাঈনুল আহসান নোবেল। তাকে বলা হয় ‘বিস্ময় বালক’। এই বিশেষণটি বেশিরভাগ সময়ই এসেছে প্রতিযোগিতার বিচারকদের কাছ থেকে।
বিচারকদের উচ্ছ্বাস ও দর্শকের ভোটে এগিয়ে থাকলেও গানের প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত প্রথম হতে পারেননি এ তারকা।
প্রসঙ্গত গত বছর সেপ্টেম্বরে জি বাংলায় শুরু হয় ‘সা রে গা মা পা ২০১৮-১৯’ প্রতিযোগিতা। ভারত থেকে নির্বাচিত ৪৮ প্রতিযোগী অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন অবন্তি সিঁথি, তানজীম শরীফ, রোমানা ইতি, মেজবা বাপ্পী, আতিয়া আনিসা, মন্টি সিনহা ও মাঈনুল আহসান নোবেল। বাকিরা নানা ধাপে ছিটকে গেলেও গোপালগঞ্জের নোবেল জায়গা করে নেন চূড়ান্ত পর্বে।