দ্য আজাদ স্টাফ
বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি
রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয়কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এর সম্পূর্ণ বক্তব্য।
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আস্সালামু আলাইকুম। শেষ অগ্রহায়ণের হালকা শীতের বিকেলে সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক উষ্ণ শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
ভোটারবিহীন গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ সরকারের দু:শাসনে দেশে এক আদিম হিং¯্রতার জয়জয়কার চলছে। এক কঠিন এবং নির্মম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ সময় অতিবাহিত করছে। মিথ্যা দিয়ে সত্যের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে, দুর্বৃত্তায়ন চলছে চারদিকে। দীর্ঘকাল কন্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে জনগণের। সর্ববিধ নিয়ন্ত্রণের প্রকোপে দেশে এক শ^াসরুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, চলছে লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের বাজার লুন্ঠন। শত শত কোটি নয়, গত এক দশকে আওয়ামী লীগের লোকজন দেশ থেকে পাচার করেছে দুইটি বাজেটের সমান প্রায় দশ লক্ষ কোটি টাকা। নিত্যদিন নারী-শিশু নির্যাতনের ছবি দেখে দেশের মানুষ আঁতকে উঠছে। সব দেখে, শুনে, বুঝেও গুম-খুন-অপহরণ কিংবা অপমানের ভয়ে, মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলেও এখন তারা পাল্টা আঘাতের জন্য প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। এই কঠিন সময়ে, যিনি ছিলেন দেশের গণমানুষের প্রতিবাদী ও সাহসী কণ্ঠস্বর, যিনি দেশের গনতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের প্রতীক, দেশের সেই সম্পূর্ণ নিরপরাধ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক ময়দানে পরাভূত করতে না পেরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জায় নিয়ে মিথ্যা মামলায় ৬৬৯ দিন হলো কারারুদ্ধ করে রেখেছেন বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এই মুহূর্তে কারামুক্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে জীবনহানীর ঝুঁকি রয়েছে। সুচিকিৎসার অভাবে তাঁর অবস্থা এখন আশংকাজনক। শেখ হাসিনা ও তাঁর পারিষদবর্গ বেগম খালেদা জিয়ার অবনতিশীল শারিরীক অবস্থা নিয়ে রীতিমত রসিকতা করছেন। এই রসিকতা এক নিষ্ঠুর মানসিক বিকারগ্রস্ততার লক্ষণ। বেগম জিয়ার জামিন যেন না হয় সেজন্য সরকারপ্রধান নিজেই প্রকাশ্য সমাবেশে রায় ঘোষনা করছেন। এতে করে এই মিডনাইট সরকারের ভয়ংকর অশুভ ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বর্তমানে দেশনেত্রীর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম আশংকায় দিনাতিপাত করছি।
তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে দেশনেত্রীর ভাই-বোন-স্বজনরা সাক্ষাৎ করার আবেদন করলেও কারাকর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনার নির্দেশে অনুমতি দিচ্ছেন না। গত ২৫ দিন হলো দেশনেত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গত ১৩ নভেম্বরের পর আর সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। ফলে দেশনেত্রীকে নিয়ে আমরা চরম শংকা ও উৎকন্ঠায় আছি। একজন বন্দীর সাথে স্বজনদের দেখা করতে না দেয়া এক চরম মানসিক নিপীড়ণ। পৃথিবীর কোন নিষ্ঠুর স্বৈরতান্ত্রিক দেশেও বন্দীদের সাথে এরুপ দুর্ব্যবহার করা হয় না, যা করা হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম জিয়ার ওপর। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সাক্ষাতের জন্য বারবার আবেদন করার পরেও কারাকর্তৃপক্ষ তাতে কোন কর্ণপাতই করেননি। কারাবিধি অনুযায়ী ৭ দিন পরপর বন্দীদের সাথে সাক্ষাতের নিয়ম। অথচ বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে এই বিধান করা হলো ১৫ দিন পরপর। এখন সেই ১৫ দিনের বিধানকেও সরকারের নির্দেশে কারাকর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করছেন কারাবিধি লঙ্ঘন করে। সরকার কর্তৃক সকল ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বেগম জিয়ার ওপর বঞ্চনার পরিমান দিনকে দিন ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করছে। এই কদর্য মানসিক নির্যাতনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল ও বিপন্ন করা। এই অমানবিক আচরণে দেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে শুধু তাঁর আত্মীয়স্বজনরাই নয়, দেশ-বিদেশের মানুষ উদ্বেগাকুল ও উৎকন্ঠিত। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
সুহৃদ সাংবাদিক বন্ধুরা, দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন, সরকারের কারসাজিতেই দেশনেত্রীর জামিন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম, নিম্ন আদালতে বিচারের নামে বেগম জিয়া অবিচারের শিকার হলেও উচ্চ আদালতে তিনি সুবিচার পাবেন। আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম, উচ্চ আদালতের বিচারকরা দেশের সংবিধান, আইন সর্বোপরি নিজেদের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন। জনগণ যেন হতাশ না হয় সেদিকে উচ্চ আদালতের সম্মানিত বিচারকবৃন্দ খেয়াল রাখবেন। কর্তৃত্ববাদী দুর্বিনীত শাসনের প্রকোপে জনগণের মধ্যে বিচার ব্যবস্থা যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে না ওঠে, সেদিকেও তাঁদের দৃষ্টি রাখতে হবে।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের মতো নয়, বরং উচ্চ আদালতকে ন্যায়বিচার অক্ষুন্ন রাখতে হবে, তা না হলে মধ্যরাতের নির্বাচনের সরকার বেগম জিয়ার জামিনে বাধা দিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। যদি খালেদা জিয়া বারবার অবিচারের শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব উচ্চ আদালতের।
সচেতন সাংবাদিক ভাই-বোনেরা, আইনগত এবং মানবিক সবদিক থেকেই বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার আইনগত অধিকার রাখেন। অথচ দেশের জনগণ দেখছে, অথচ নানা অজুহাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন পেতে নানারকমের অজুহাত তুলে প্রলম্বিত করা হচ্ছে তাঁর বন্দী জীবন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, কারাবন্দী খালেদা জিয়া রাজার হালেই আছেন এবং ভাল আছেন, সেখানে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যায় যে, বেআইনীভাবে ক্ষমতা দখলকারী স¤্রাজ্ঞীর হালে থাকা সরকারপ্রধানের অভিপ্রায়টি কি ?
বন্ধুরা, দেশনেত্রীকে বাঁচাতে হলে এখনই জামিন ও সুচিকিৎসা দরকার। তাই আমরা জনগণের পক্ষ থেকে সরকারকে বলতে চাই-দেশনেত্রীর জামিন নিয়ে এবার কোন রকমের টালবাহানা করে বেগম জিয়ার জামিনে কোন বাধা দিবেন না। আপনাদের সকল গণভিত্তি কর্পুরের মতো উবে গেছে। শেখ হাসিনার স্বনির্মিত দু:শাসনের শৃঙ্খল থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হবে। মানুষের ক্ষোভ ও বঞ্চনা সংহত করে তা আন্দোলনে রুপদান করতে জনগণ রাজপথে নামতে শুরু করেছে।
সাংবাদিক বন্ধুরা, দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল সিবিএ ও ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে মুজুরী কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া মুজুরী পরিশোধসহ ১১ দফা দাবী আদায়ে গত ২৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখ থেকে পাটকল শ্রমিকরা আন্দোলনে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মুজুরি না পেয়ে চরম অর্থসংকটে রয়েছে। তাতে পরিবার-পরিজনদের মুখের আহার জোটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি অন্যদিকে শ্রমিকদের দাবী বাস্তবায়নে সরকারের উদাসীনতা এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে পাটকল শ্রমিক কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের নিয়ে স্ব স্ব মিলগেটে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাচ্ছে শ্রমিকরা। অবিলম্বে শ্রমিকদের সকল দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানাচ্ছে বিএনপি। জনগণের আস্থার রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শ্রমিকদের এই দাবীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
বন্ধুরা, আজ দেশব্যাপী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে। সেটিরই একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি-
ঢাকা মহানগর দক্ষিণঃ আজ ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিক্ষোভ কর্মসুচি চলাকালে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের আক্রমণে কোতয়ালী থানা বিএনপি নেতা লিমন, চকবাজার থানা বিএনপির নেতা আতিক,মঈন, হৃদয়সহ ৫ জন এবং শাহবাগ থানার আবদুর রশিদ, সুমন, শাকিল, সুজনসহ ১০/১২ জন আহত ও শাহবাগ থানা বিএনপির মোঃ রফিক নামে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
সিরাজগঞ্জঃ আজ বিক্ষোভ কর্মসুচি চলাকালে সিরাজগঞ্জ শহরে বিএনপি মিছিলের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা করে। এই হামলায় জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক স¤ক্সাদক শামীম চোখে রাবার বুলেটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়। হামলায় অন্তত: ৮জন নেতাকর্মী গুলিতে আহত হয়। পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি’র বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলা করেছে এবং দলীয় কার্যালয়ে আগুণসহ নেতাকর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে হামলা চালিয়েছে। আমি সরকারের এই সন্ত্রাসী ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
ফরিদপুরঃ ফরিদপুর জেলা বিএনপির মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। এতে অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। শান্তিপূর্ণ কর্মসচিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলা ও নেতাকর্মীদের আহত করার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
কর্মসূচি — বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও মহানগর সদরে বিএনপি’র উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিক্ষোভ সমাবেশ/মিছিল আয়োজন করবে।