দ্য আজাদ স্টাফ
নিজস্ব প্রতিবেদনে: গুলশান চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রোববার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সমূহ:
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের দাবি৷
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা, শাজাহান সিরাজ এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা ৷
ভারতের সাথে চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ ও ন্যায্য পাওনার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ৷
গ্রামীণ ফোন এবং রবি’র বিরুদ্ধে প্রশাসক নিয়োগকে বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে৷
বিচার বিভাগে দলীয় নিয়োগ দেয়া অব্যাহত রয়েছে যা বিচার বিভাগের জন্য মারাত্মক হুমকি৷
রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর মিয়ানমারের পক্ষে কাজ করবে, দ্রুত তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে ৷
ভোলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত না করে সাধারণ মানুষের উপর মামলা প্রতাহার করার দাবি ৷
জাতীয় স্থায়ীকমিটির সভা শেষে প্রেসকনফারেন্সে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীরের সম্পূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরা হলো —
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রসিকতা করছেন অভিযোগ করেছে বিএনপি।
শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কথা বলার অধিকার ওবায়দুল কাদেরের নেই।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কি আছে তা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। কারণ তিনি ডাক্তার নন। তিনি তার রাজননৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলছেন। আপনারা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদ দিয়ে মানবিক হোন। ওবায়দুল কাদের যখন অসুস্থ হয়েছেন তাকে আমরা হাসপাতালে দেখতে গেছি, তিনি বিদেশে গেছেন আমরা তার আশু মুক্তি কামনায় দোয়া করেছি। বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিএসএমএমইউর পরিচালকের বিবৃতি ‘অসত্য’ দাবি করে এর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিন্দা জানানো হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তিনি প্রায় পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। অলমোস্ট তিনি ক্রিটিক্যাল স্টেইজে। এখন তিনি নিজে কিছুই করতে পারেন না, তাঁকে সহযোগিতা করতে হয়। এ বিষয়টাকে কেনো পিজি হাসপাতালের পরিচালক গোপন করেছে তা বোধগম্য নয়। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের সঠিক তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। সাধারণ একটা বন্দির অধিকার সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে গেছেন। আর এখন তিনি কারো সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। দিন দিন তাঁর শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটছে। এটাতো বাস্তবতা। এটা কোনো নতুন কথা নয়। তাই আমরা বলি এসব পুরাপুরি মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে এবং জনগণকে প্রকৃত সত্য থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এভাবে ধীরে ধীরে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য এসব মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথায় অন্তত আমি বিস্মিত হয়েছি। তিনি যখন অসুস্থ হয়েছেন আমরা ওনার খোঁজ খবর রেখেছি এবং রোগমুক্তি কামনা করেছি। তাই বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রসিকতা করা রাজননৈতিক শিষ্টাচারের লক্ষণ নয়।
ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তিসমূহের বিস্তারিত জানতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেবে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী যে চুক্তিগুলো সম্পাদন করে এসেছেন এই চুক্তিগুলো অবিলম্বে দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। আজকে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেবো তথ্যগুলো জানানোর জন্য যে, কি ধরনের চুক্তি হয়েছে। একই সঙ্গে তথ্য অধিকার যে আইন আছে সেই আইনকে সামনে নিয়ে আমরা তথ্য কমিশনের কাছেও চিঠি দেবো চুক্তির বিষয়গুলো জানার জন্য। কারণ আমরা মনে করি, এ চুক্তিগুলো সম্পর্কে দেশবাসীর মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসা আছে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত হয়েছে। আপনারা জানেন যে, ফেনী নদীর পানি দেয়ার বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে তাতে আমাদের পানি দিতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু আমাদের যে বড় সমস্যা তিস্তা নদীর পানি সদস্যা দীর্ঘকাল হয়ে গেলো তার কোনো সমাধান হচ্ছে না।
সাদেক হোসেন খোকার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘকাল বিদেশে অবস্থান করছেন এবং দুরারোগ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অতি সম্প্রতি তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন তিনি হাসপাতালে, তিনি জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি। সভায় তার আশু রোগ মুক্তির জন্য দোয়া চেয়েছে এবং একই সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে তার জন্য দোয়া করার আহবান জানাচ্ছি। একসঙ্গে অসুস্থ স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া ও আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী শাহজাহান সিরাজ অত্যন্ত অসুস্থ তাদেরও আশু রোগমুক্তি কামনা করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বাংলাদেশের নীতির বিপক্ষে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের স্থানান্তরের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নীতির বিরোধী। যেখানে আমরা সব সময় বলছি যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। আপনারা আবার স্থায়ীভাবে তাদেরকে রাখার জন্য আপনারা (সরকার) চরের মধ্যে গিয়ে চমৎকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এর অর্থ হচ্ছে যে, আমরা মেনে নিচ্ছি প্রকারান্তরে রোহিঙ্গারা এখানে থাকবে। আমরা মনে করি এটা সম্পূর্ণ স্ববিরোধী। এই সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যের দিকে সরকার যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
বড় দুর্নীতিকে আড়ালে শুদ্ধি অভিযান বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্যাসিনো স্ক্যান্ডালসহ দুর্নীতির বিষয়ে যে শুদ্ধি অভিযান এটাকে সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এটা (শুদ্ধি অভিযান) মূল দুর্নীতিকে অর্থাৎ জাতীয় দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য এই ছোট-খাটো দুর্নীতিগুলোকে সামনে নিয়ে এটাকে আড়াল করা হচ্ছে। সমগ্র জাতি আজকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। সরকারের লোকেরা সরাসরি এই দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমন কমিশন তো সব সময় নিরপেক্ষ থাকে না। সেজন্য নিরপেক্ষ একটা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই দুর্নীতির তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
হাইকোর্টের ৯ বিচার নিয়োগ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের যে নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা এখন নেই বললে চলে। ইতিমধ্যে নিয়োগ চলছে পুরোদমে। সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগে ৯ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি যে, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এসব নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারপতি নিয়োগ দিলে সুষ্ঠু বিচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে আমরা মনে করি না। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় নিয়োগগুলো আরো বেশি করে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলে আমরা মনে করি। ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে হাইকোর্টে দায়েরকৃত মামলাগুলোর অবিলম্বে উচ্চ আদালতের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবির পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।