দ্য আজাদ স্টাফ
হোম প্রচ্ছদ ভারতে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ March 1, 2020
মসজিদে আগুন দিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানের হৃদয়ে আগুন দিয়েছে : ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ মুসলিম শূণ্য করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে রাজধানী নয়াদিল্লিতে মুসলমানদেরকে গণহারে হত্যা করা হচ্ছে: মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ভারতে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মিছিল শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান জামায়াত নেতারা। রোববার সকালে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন শাখা গুলোতে একযোগে এই বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি।
বিক্ষোভ শেষে জামায়াত নেতারা বলেন, ভারত স্বাধীন হয়েছিল মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে। ৯২ হাজার শহীদের মধ্যে ৬৫ হাজার মুসলমান জীবন দিয়ে ভারতকে স্বাধীন করেছিলেন। এই স্বাধীনতার শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করলে, মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেললে ভারত ভেঙে খান খান হয়ে যাবে।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চীনকে দেখে ভারত সরকারের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবীতে এককভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। অনতিবিলম্বে ভারতকে এই নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় ১৫০ কোটি মুসলমান সারাবিশ্ব থেকে ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা। রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইত্তেফাক মোড়ে এক সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
মিছিল শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদে বলেন, ভারতে মুসলমানদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। মা বোনদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। মুসলিম হিসেবে আমরা তা মেনে নিতে পারি না। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের দিল্লিতে উগ্রপন্থী হিন্দুরা শুধুমাত্র মসজিদেই আগুন দেয়নি, এই আগুন দেয়ার মাধ্যমে তারা সারাবিশ্বের দেড়শ কোটি মুসলমানের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আজকের চীন মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও অন্যায় আচরণ করার কারণে গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চীন থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত যদি তাদের এই অন্যায় আচরণ বন্ধ না করে, মুসলিম নির্যাতন ও হত্যা বন্ধ না করে, তাহলে অচিরেই ভারতও গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ভারতের শান্তিপ্রিয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। সেইসাথে একথাও বলে দিতে চাই অবিলম্বে জুলুম-নির্যাতন ও হত্যা বন্ধ না করলে এবং আগামী দিনে মুসলমানের উপর জুলুম ও আগ্রাসন চালালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের ২০ কোটি মানুষকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তার মোকাবেলা করবে।
তিনি মুসলিম উম্মাহসহ জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভারতে বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এর পরিণাম কারো জন্যই সুখকর হবে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত সমাবেশে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, মুসলিম শূণ্য করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে রাজধানী নয়াদিল্লিতে মুসলমানদেরকে গণহারে হত্যা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে গোটা ভারতই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। ইতোপূর্বে এ আইনটি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় ১০০ আবেদন জমা পড়েছে। ঘটনার ভয়াবহতায় জাতিসংঘ, ওআইসি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার আন্তর্জাতিক এই সংস্থাগুলোর আহবানে কোন সাড়া দেয়নি। ফলে সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতিই ঘটেছে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে এসেছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ইতোমধ্যেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছে, পরিস্থিতি আরো জটিল রূপ ধারণ করতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনেরও দাবি উঠেছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত সরকারকে উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এসময় তিনি ভারতে মুসলিম হত্যা বন্ধে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসি ও আবরলীগসহ বিশ সংস্থাগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহবান জানান।