দ্য আজাদ স্টাফ
এবারের ঈদযাত্রায়ও ভোগাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই লেনের তিন সেতু। এই মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। চার লেনের মহাসড়কে ৬০-৮০ কিলোমিটার গতিবেগের গাড়ি দুই লেনের মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুর ওপর ওঠার সময় গতি ১০-১৫ কিলোমিটারে নেমে আসে। তখনই মহাসড়কের ওই অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তিনটি দুই লেনের সেতু ছাড়াও মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তায় বাজার বসা, উল্টোপথে গাড়ি চলাচল, গাড়ি বিকল হওয়া, দুর্ঘটনা এবং কম গতির চলাচলের কারণে এই মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ঈদের তিন দিন আগে থেকে পণ্যবাহী সব ধরনের গাড়ি মহাসড়কে চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঈদযাত্রায় পণ্যবাহী গাড়ি বন্ধ থাকলে যাত্রী পরিবহনে দুর্ভোগ কমতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক গাড়ি চলাচলের উপযোগী রয়েছে। কিন্তু ফেনীর রেলক্রসিংয়ে নির্মাণাধীন উড়ালসেতু, দুই লেনের দাউদকান্দি, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুর কারণে মহাসড়কের পুরো সুফল যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা পাচ্ছেন না। তবে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতু খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াত সম্ভব হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণাধীন তিনটি সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. ছায়দুল হক এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প মেয়াদের ছয় মাস আগে আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতু খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের তিনটি সেতু চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির গতি ৬০ কিলোমিটারের ওপরে থাকবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের প্রথম আলোকে জানান, সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতু নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যমান দুই লেনের তিনটি সেতুর সংস্কার ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং কাঁচপুর সেতু থেকে সিলেটমুখী যানবাহনের জন্য আলাদা নির্গমণ পথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।
ফেনীর উড়ালসেতু এবারের ঈদযাত্রায় ফেনীর ফতেহপুর উড়ালসেতু অংশে যানজট মুক্ত থাকা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। কারণ, এই উড়ালসেতু ৩০ ফুট উঁচু এবং ভারী গাড়ি ওঠার সময় গতি ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারে নেমে আসে। এতে পেছনের গাড়ির গতিও থমকে যায়। ঈদের আগে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উড়ালসেতুর নিচ দিয়ে থাকা দুই লেনের সংস্কার ও মেরামতের কাজও পুরোদমে চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামমুখী উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এর আগে উড়ালসেতুর ঢাকামুখী এক লেন ১৫ মে এবং দ্বিতীয় লেন ২০ মে খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু যানজট এড়ানোর জন্য ঢাকামুখী উড়ালসেতুর এক লেন দিয়ে ঢাকাগামী এবং অন্য লেন দিয়ে চট্টগ্রামগামী গাড়ি পার করে দেওয়া হচ্ছে।
ফেনী জেলা পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক, প্রশাসন) মীর গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের দারোগারহাটে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন (গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) ভেঙে ফেলার কারণে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি ৩০ ফুট উঁচু ফতেহপুর উড়ালসেতুতে ওঠার সময় গতিসীমা কমে ৫-১০ কিলোমিটারে নেমে আসে। ফলে পেছনে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
ভোগান্তি নারায়ণগঞ্জ থেকে দাউদকান্দি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে শিমরাইল কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে কয়েকটি কারণে। এর মধ্যে রয়েছে মহাসড়কের গাড়ি দুই লেনের কাঁচপুর সেতুতে উঠলে গতি কমে যাওয়া, সেতু পারাপারের সময় পণ্যবাহী ভারী গাড়ি বিকল হওয়া, দূরপাল্লার বিভিন্ন বাস সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করা, উল্টোপথে লোকাল গাড়ি চলাচল এবং ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়া।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সহকারী সুপার আব্দুর রশিদ জানান, মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় গাড়ির গতি থমকে যাচ্ছে। সড়ক বিভাজক না থাকায় ছোট গাড়ি মহাসড়কে চলে আসছে। এ ছাড়া সিলেটমুখী যানবাহনের জন্য আলাদা নির্গমণ পথ তথা উড়ালসড়ক নির্মাণ হচ্ছে বলে সড়কে যানজট হচ্ছে। ভুলতাবাজারও যানজট সৃষ্টির অন্যতম একটি কারণ।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং কম গতির গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার কারণে মেঘনা ও গোমতী সেতু এলাকায় যানজট কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এখন। তবে ঈদে আবার যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, মহাসড়কের পাশে অবৈধ গড়ে ওঠা দোকানপাট এখনো উচ্ছেদ হয়নি। উল্টোপথে গাড়ি চলাচল ও পথচারীদের রাস্তা পারাপার এবং দাউদকান্দিতে অবস্থিত মেঘনা-গোমতী সেতুর নিচ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক পাথর ও বালুবাহী ট্রাক উল্টোপথে পারাপারের কারণে যানজট হচ্ছে।
দাউদকান্দির সহকারী কমিশনার অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ ফিটনেসবিহীন ও কম গতিতে চলাচল, সড়কে গাড়ি বিকল হওয়া ও দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া। ঈদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন রাখতে এক সপ্তাহ ধরে ফিটনেসবিহীন ও কম গতির গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এ জন্য মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে।
মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে সতর্ক ঈদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড অংশে যানজট হতে পারে এমন কয়েকটি স্থান নিয়ে সতর্ক হাইওয়ে পুলিশ। এলাকাগুলো হচ্ছে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকার টোল সড়ক বড় দারোগারহাটের এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন এবং মিরসরাইয়ের পৌরবাজার ও বারৈয়ারহাট পৌরবাজার।
হাইওয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট মুক্ত রাখতে কক্সবাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত দুটি ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ পর্যন্ত অংশকে একটি অঞ্চল করা হয়েছে। মহাসড়কের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের চারটি অংশে সমস্যা হবে মাথায় রেখে পুলিশ কাজ করছে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি ও মিরসরাই প্রতিনিধি)