দ্য আজাদ স্টাফ
রাজাকার তালিকা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: ফখরুল
দ্য আজাদ ডেস্ক
রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পর রাজাকারদের তালিকার প্রয়োজনটা কী? এই তালিকায় প্রকৃত রাজাকারদের বাদ দিয়ে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তালিকা তৈরি করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বলা হচ্ছে তালিকা নাকি পাকিস্তানের। পাকিস্তানের তালিকায় তো এ দেশের তালিকা হবে না। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে একটি প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি উদ্বোধনের পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। র্যালির আয়োজন করে বিএনপি।
এ দিকে র্যালিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করে বিএনপি। আড়াইটার দিকে র্যালি শুরু হলেও নেতা-কর্মীরা দুপুর ১২টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও এর আশপাশে এসে অবস্থান নিতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হলে সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ীভাবে বানানো মঞ্চ থেকে আগত মিছিলকে অভিনন্দন জানানো হয়। র্যালি শুরুর আগে পুরো নয়াপল্টন সড়ক ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে র্যাউলিতে অংশ নেন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
দলীয় ও জাতীয় পতাকা, রং-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতিসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তারা অংশ নেন। এ ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। এ সময় ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব,’ ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে থাকতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল করে তুলেন তারা। র্যালিটি নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে র্যালিকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য তৎপর ছিল পুলিশ। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
র্যালি শুরুর আগে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি- এই সরকার অন্যায়ভাবে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে জোর করে জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে। আজকে আমরা দেখতে পাই- আমাদের যেই ভাই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে সেই ভাই’ই গুম হয়ে যাচ্ছে। চার-পাঁচ বছর পার হয়ে যায় কিন্তু আমাদের সেই ভাইদের সন্তানেরা তাদের পিতার খোঁজ পায় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলে, তারা মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক।কিন্তু এরাই দেশের সব গণতন্ত্র হত্যা করেছে। এরা ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করে দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছিল। ‘৭৫-এ আওয়ামী লীগের সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল এবং মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগ এখন আবার জোর করে ক্ষমতায় চেপে বসেছে। আমাদের লাখ লাখ দেশপ্রেমিক মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে এই দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। তারা আমাদের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় আছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এই র্যা লির নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার, যিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী। যিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। কিন্তু আজকের দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে দেশনেত্রীকে ছাড়াই আমাদের এই র্যােলিতে অংশ নিতে হচ্ছে।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত করে আনব ইনশাআল্লাহ। আপনারা সব বিভেদ ভুলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য একটি ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন এবং এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করুন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল, আজকে দুঃখের সহিত বলতে হয় সেই মূল চেতনা ‘গণতন্ত্র’ বাংলাদেশে ভূলণ্ঠিত।
তিনি বলেন, একটি মিথ্যা মামলায় সরকারের নির্দেশে মাদার অব ডেমোক্রেসি গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি জামিনপাপ্য হলেও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, শুধু একব্যক্তি ও একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য, এ দেশের সবকিছু ধ্বংস করে বর্তমান সরকার লুটেরা অর্থনীতি তৈরি করেছে। তাই আজ কেউ শান্তিতে নেই। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে না পারলে আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারব না, দেশের গণতন্ত্র মুক্তি হবে না। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে।
আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া কারাগারে। আসুন আমরা আজ মরি-বাঁচি (ডু অর ডাই) শপথ নেই, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি।
র্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুল হাই, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
এ ছাড়া অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে ছিলেন যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিম বাদরু, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কৃষক দলের কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মৎস্যজীবী দলের মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব, আব্দুর রহিম,তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক প্রমুখ। উৎস যুগান্তর