দ্য আজাদ স্টাফ
ওয়াসিম ইফতেখার
২০০৩, উত্তরা ৪ নং সেক্টরে একটা বাসায় কিছু ছাত্র মিলে থাকতাম। বাড়ী’র পুরোটা ব্যাচেলর ভাড়া দেয়া হত। আমি ছিলাম নিচ তলাতে।
হঠাৎ একদিন দেখি রুমের সামনে আলো। এত আলো যে রাতে ঠিক মত ঘুমাতে পারলাম না। আলোর উৎস হল ঐ বাড়ীর সামনের খালী প্লটে একটা নিয়ন বোর্ড লাগানো হয়েছে, পাঁচ তলা এপার্টমেন্ট হবে। সেখানে ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করতে সাইনবোর্ড ঝুলছে। তখন ছিল এপার্টমেন্টের রমরমা ব্যবসা। সাইনবোর্ড লাগানো দোষ না কিন্তু সমস্যা হল এটার কারণে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল।
পরদিন সকালে ঐ প্লটে হোষ্টেলের এক সদস্য গিয়ে এক দারোয়ান পেল, তাকে জিজ্ঞেস করল এখানকার চীফ কে? দারোয়ান সেই বিজ্ঞাপনে ইঙ্গিত করে ফোন নাম্বার দেখালো।
ঐ নম্বরে ফোন করে অনুরোধ করা হল রাত বারোটার পরে যাতে সাইন বোর্ডের আলো নিভিয়ে ফেলে। কিন্তু ঐ লোক কথা শুনল না। বরং তার কথায় কেমন যেন তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেল। ছেলেটি কে অবশ্য সেই লোক বলেছে “আমি বিকালে প্রজেক্টে আসছি”। বিকালে দুই রুম মেট তার সাথে দেখা করতে গেলে জানিয়ে দেওয়া হয়ঃ
“এই লাইট রাতে নেভানো যাবে না”।
ছেলে দুটি ইয়াং, ছাত্র, রক্ত গরম। তারাও হুমকি দিল। ঐ লোকটিও হুমকি দিল
“এই ল্যান্ড কোম্পানির মালিক তারেক জিয়া। কেউ এর ক্ষতি করতে পারবে না। বরং কিছু করতে গেলে তার ক্ষতি হবে।”
কিছুক্ষণ পরে পুলিশের এক SI হাজির। সে আমাদের হোষ্টেলে ঢুকে ছেলে দু’টিকে মোটামুটি শাসিয়ে গেল। এক ঘন্টা পরে উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাবের এক মাস্তানকে ঐ প্রজেক্টে দেখা গেল। হোষ্টেলে লোকজন ততক্ষণে তারেক জিয়া, খালেদা জিয়ার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে শেষ। যে যেভাবে পারে গালি দিচ্ছে। কেউ বলছে “শালার পুত, খাইলে খা, দেশটারে তো খাইলি। আমাদের রাতে শান্তি তে ঘুমাইতে দে। আমরা কি খাওয়ায় ভাগ বসাইছি? আগামী ভোটে দেখাইয়া নিমু।”
কোম্পানি যে তারেক জিয়ার-ই তা শিউর হল পুলিশের SI এর থ্রেট শুনে।
আমি ঐদিন দশটায় হোষ্টেলে ফিরেছিলাম। পোলাপাইন তো আমাকে দেখেই গালাগালি..
“ঐ তারেকের দালাল এসেছে” হ্যান ত্যান ইত্যাদি ইত্যাদি। পুরো ঘটনা শুনলাম। তখনই একজন ভাইকে (নেতা) ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম ‘*** কোম্পানি’ কি তারেক জিয়ার? উনি উত্তর দিলেন “প্রধানমন্ত্রী পুত্র’র কি খেয়ে দেয়ে কাজ নাই যে ডেভেলাপার কোম্পানি করবে?
তবুও শিউর হতে আমি ওনাকে ফোনে চেষ্টা করছি। জানতে পারলে জানাবো। আধাঘন্টা পরে ফোনে জানালেন লিডারের সাথে কথা হয়েছে, ঐ কোম্পানির নাম রাস্তার বিলবোর্ডে দেখে জানেন। মালিক বা অন্য কিছু চিনেন না।
তারেক রহমান এসব বিষয়ে খুব কড়া ছিলেন। তিনি ঐ ভাইকে জানালেন “আগামীকাল সকালেই যেন উত্তরা থানার ওসি সেই পুলিশের বিরুদ্ধে একশান নেয় এবং কি একশান নিয়েছে সেটা যেন আমাকে জানানো হয়”
ভায়ের কথা মত আমি দেরি না করে সকালে থানায় গিয়ে ওসির সাথে দেখা করতে চাইলাম। উনি ব্যস্ত জানালে আমি বললাম “হাওয়া ভবন” থেকে এসেছি।” কারেন্টের মত এ্যটেনসনে খাড়া হয়ে গেলেন ওসি। তাকে বললামঃ
“তারেক ভাইয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে *** কোম্পানি ব্যবসা করছে আর আপনার SI সেই মিথ্যে প্রচার করছে।”
ওসি সাহেব হেসে বললেন “ভাই সবাই তো এখন ওনার নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে। এই তো আপনিও তো বললেনঃ হাওয়া ভবন থেকে এসেছি। আমি কী-ভাবে বুঝব আপনি কোন ভবন থেকে এসেছেন?”
ওনার কথাতে লজ্জা পেলাম। আসলেই তো? ওসির সাথে দেখা করতে আমি নিজেও তো হাওয়া ভবনের নামে মিথ্যা কথা বললাম। সামান্য একটা সাইনবোর্ডের জন্য মিথ্যা বললাম তাহলে ধান্দাবাজ বণিক রা না জানি কী করছে!
পুলিশ ঐদিন, ঐ প্লট থেকে সাইন বোর্ড খুলে নেয়। আর উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাবের সেই মাস্তান হোষ্টেলে এসে ক্ষমা চেয়ে যায়।
মাস্তান ভাই SI ভায়ের কাছে শুনেছেন হাওয়া ভবনে আমার অবাধ যাতায়াত। আমার হ্যালো ছাড়া নাকি ভাইয়ার ঘুম ভাঙে না(!) বুঝলাম হাওয়া ভবনের নাম ভাঙাতে আমিও লায়েক হতে পারবো।
এক সন্ত্রাসী আমার কথা শুনে হোষ্টেল মেম্বারদের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় আমার বুকের ছাতি ফুলে ৩৬ ইঞ্চি। আসলেই তো হাওয়া ভবনের কঠিন জোর আছে। অথচ বাস্তব ঘটনা শূন্য। হাওয়া ভবন হুইস্পার ব্যাতীত কিছু না। খতিয়ে দেখলেই হাওয়া ভবন হাওয়া…
কিছুদিন পরে ঢাকার গাবতলী টু বগুড়া একটা সুন্দর বাস ছাড়া হল। বাসের নাম TR ট্রাভেলস। EPZ এ এক ঘটনার প্রেক্ষিতে রটে গেল TR অর্থ তারেক রহমান। তাই তারেক রহমান-ই এই বাসের মালিক। ট্রাফিক সার্জন ও বলল ‘নাম দেখে যায় চেনা’। বিএনপি হয়তো অপেক্ষায় ছিল BG press কে যেদিন বেগম জিয়া প্রেস বলা হবে সেদিন তারা একসানে নামবে।
পরে জানা গেল তাজমহল রোডে মালিকের দাদার বাড়ি। সেই থেকে বাসের নাম TR.
ফখরুল ইসলাম ১৪ সালে লেখা।
মজার ব্যপার হচ্ছে এই ধরণের মিথ পাব্লিক বিল্ড করে না। বরং গড়ে তুলা হয় তৃণ-মূলে গুপ্তচর, এজেন্ট প্রস্তুতের মাধ্যমে। একবার রব উঠে গেলে কেল্লা-ফতে। অটো সাজেশন কাজ করতে শুরু করে।
তাহারা ও তাহাদের প্রভুরা, শত্রু বধে সফল হয়েছে। আমরা হয়েছি পরাজিত।
এখনো কিছুটা সময় আছে প্রচার প্রচারণা, প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে ও ইমেজ টিউনে মেধা বিনিয়োগ করে প্রফেসনালদের দায়িত্ব দেয়া।
আফসোস ২০১৯ সালে এসেও দল এসব ইভিল কম্পোজিশনের গুরুত্ব বুঝতে পারছে না! তবুও বলি শুভ জন্মদিন লিডার।
২০-১১-২০১৯ লেখক: ওয়াসিম ইফতেখার